ঝিনাইদহের পানি উন্নয়ন বোর্ড নিয়ে দুর্নীতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করায় ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের তালাশ টিমের সাংবাদিক বনি আমিন, প্রযোজক ও ঝিনাইদহে যাওয়া অন্য সদস্যদের নামে যশোর আদালতে মামলা হয়েছে। মামলাটি করেছেন ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ। তিনি যশোর উপশহর এফ ব্লকের আব্দুল বাতেনের ছেলে। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুদ্দীন হোসাইন বিষয়টি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন যশোর জোনকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। একইসাথে আগামি ২২ ফেব্রুয়ারি মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেছে আদালত।
মামলার বাদী বলেছেন, তিনি গত তিন বছর ধরে সুনামের সাথে ঝিনাইদহে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী পদে চাকরি করছেন। গত ৫ ডিসেম্বর তালাশ অনুষ্ঠানের ব্যানারে ইউটিউব ও ফেসবুকে তার বিরুদ্ধে প্রোমো সংবাদ প্রচার করা হয়। যার শিরোনাম ছিল লাখ টাকার চামচ। এরপর গত ১১ ডিসেম্বর ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভেশনে রাত সাড়ে নয়টায় আসামিরা যোগসাজসে তালাশের ১শ’৯৭ পর্বে তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচার করা হয়। সেখানে একটি চামচের দাম বলা হয়েছে ৯৯ হাজার টাকা।
মামলায় বলা হয়েছে, অনুমোদিত ও এস্টিমেটে ওই চামচের কোনো অস্তিত্ব নেই। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে অফিসে ও পরিদর্শন বাংলোর জন্য ক্রোকারিজ ও পরিস্কার মালামালের ১৮ আইটেম সাপ্লাইয়ের জন্য ব্যয় হয়েছে ৯৭ হাজার টাকা। কিন্তু সংবাদে প্রচার করা হয়েছে ৪ প্যাকেট মবিল গ্রিজের দাম চার লাখ টাকা। যা সত্য নয়। সংবাদে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করা হয়নি বলে বাদীর অভিযোগ।
মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, বিদ্যুৎ লাইন সংস্কার বাবদ আট লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু বিস্তারিত কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। তার দাবি বিধান অনুযায়ী কাজটি যথাযথ ভাবেই বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সংবাদে বলা হয়েছে দুই লাখ টাকার ২০টি গাছ রোপণ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৩শ’৪৮টি গাছ রোপণ করা হয়েছে বলে মামলায় বাদী উল্লেখ করেন।
এছাড়া সংবাদে উপহার পাওয়া বিলবোর্ড বাবদ তিন লাখ ১৫ হাজার টাকা উল্লেখ করার বিষয় মিথ্যা বলে বাদী দাবি করেছেন। পাম্পের গেট বাবদ একলাখ ৬৬ হাজার টাকা, জঙ্গল পরিস্কার বাবদ একলাখ ১৭ হাজার টাকা, বাংলো কিংবা অফিস আঙ্গিনা ২৪ হাজার ৭শ’৮ বর্গমিটার জায়গা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। সংবাদে বলা হয় শৈলকুপা অফিসে নিয়মিত কর্মকর্তারা অফিস করেন না। কিন্তু বাদীর দাবি তালাশ টিম শুক্রবার ওই এলাকায় অনুসন্ধানে গিয়েছিল। শৈলকুপা অফিসের চেয়ার, পর্দা, জঙ্গল পরিস্কার বাবদ যে খরচ উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে আরো আইটেম সংযুক্ত ছিল। তালাশের টিম মনগড়া প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন বলে বাদী মামলায় উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, গত ২০ নভেম্বর যশোর শহরের একটি শপিং কমপ্লেক্সের মধ্য থেকে বাদীর সাক্ষাৎকার গ্রহন করা হয়। এসময় রিপোর্টার বনি আমিন বাদীর কাছে মোটা অংকের উৎকোচ দাবি করেন। এসময় তা দিতে বাদী অসম্মতি জ্ঞাপন করেন। এছাড়া গত ১২ ডিসেম্বর বাদী এ বিষয়ে আসামিদের লিগ্যাল নোটিশ দেন। তারপরেও গত ১২ ডিসেম্বর তালাশের ১৯৭ পর্বে ঝিনাইদহের পানি উন্নয়ন বোর্ড নিয়ে উদ্দেশ্যমুলক সংবাদ প্রকাশ করে অভিযুক্তরা। এতে করে তারা শুধু নয়, পুরো বিভাগের ভাবমুর্তি নষ্ট করা হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
খুলনা গেজেট/কেএম