খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ | ২৯ মার্চ, ২০২৪

Breaking News

৬ হাজারের বেশি প্রাণহানি

জুলাইয়ে দেশে করোনায় সর্বাধিক মৃত্যু

গেজেট ডেস্ক

করোনাভাইসে আক্রান্ত হয়ে জুলাই মাসে সর্বাধিক ৬ হাজার ১৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর কোনো মাসে এত মৃত্যু হয়নি। এর আগে গত এপ্রিলে সর্বোচ্চ ২৪০৪ জনের মৃত্যু হয়।

জুলাই মাসে গড়ে প্রতিদিন ১৯৯ জনেরও বেশি মৃত্যু হয়েছে। দৈনিক হিসাবে গত ২৭ জুলাই দেশে সর্বোচ্চ ২৫৮ মৃত্যু হয়।

মাসওয়ারি হিসাবে দেখা গেছে, জুলাই মাসে করোনা ভাইরাসে মোট মারা গেছে ৬ হাজার ১৮১ জন। অর্থাৎ এ মাসে করোনায় দেশে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আর কোনো মাসে এত মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। এর আগে গত এপ্রিলে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৪০৪ জনের মৃত্যু হয়। জুলাই মাসে গড়ে প্রতিদিন ১৯৯ জনেরও বেশি মৃত্যু হয়েছে। দৈনিক হিসাবে গত ২৭ জুলাই সর্বোচ্চ ২৫৮ মৃত্যুর খবর আসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে। অর্থাৎ মাসওয়ারি হিসাবে জুলাইয়ে সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আবার দৈনিক মৃত্যুতেও এখন পর্যন্ত ২৭ জুলাই সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড।

করোনার মাসভিত্তিক মৃত্যু চিত্রে দেখা গেছে, গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর খবর আসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে। ওই মাসে ৫১ জনের মৃত্যু হয়। এর পর এপ্রিলে ১৬৩ জন, মেতে ৪৯২, জুনে ১ হাজার ১৯৭, জুলাইয়ে ১ হাজার ২৬৪, আগস্টে ১ হাজার ১৭০, সেপ্টেম্বরে ৯৭০, অক্টোবরে ৬৭২, নভেম্বরে ৭২১ এবং ডিসেম্বরে ৯১৫ জন মৃত্যুর খবর জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আর চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মারা যায় ৫৬৮, ফেব্রুয়ারিতে ২৮১, মার্চে ৬৩৮, এপ্রিলে ২ হাজার ৪০৪, মেতে ১ হাজার ১৬৯ এবং জুনে ১ হাজার ৮৮৪ জন করোনায় মারা যায়।

করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর লাগাম টানতে ১ জুলাই থেকে দেশে ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন শুরু হয়। ওই দিন থেকেই আক্রান্ত ও মৃত্যু বাড়তে থাকে। ১৪ দিনের লকডাউন শেষে সরকার ঈদ উপলক্ষে ৫ দিনের জন্য লকডাউন শিথিল করে। তখন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করে লকডাউন শিথিল না করার পরামর্শ দেন। ঈদ উপলক্ষে মানুষের এক শহর থেকে আরেক শহরে যাতায়াতে সংক্রমণ আরও বেড়ে যেতে পারে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এমন প্রেক্ষাপটে করোনার লাগাম টানতে গত ২৩ জুলাই থেকে আবার ১৪ দিনের লকডাউন শুরু হয়, যা এখনো চলমান।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার ডেল্টা বা ভারতীয় ধরনের কারণেই জুলাই মাসে এত মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। মানুষ ঠিকমতো স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আজ থেকে শুরু হওয়া আগস্ট মাসেও ডেল্টার আগ্রাসী আক্রমণ অব্যাহত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা জনস্বাস্থ্যবিদদের। এ সময় মৃত্যু ও আক্রান্তের লাগাম টানতে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তা না হলে সহসা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে কিনা তা এখনো বলা কঠিন বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণপূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, এখন হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করা দরকার। করোনামুক্ত হওয়ার জন্য ৯০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে হবে। টিকার পরিমাণ বাড়াতে হবে এবং কবে নাগাদ টিকা দেওয়া শেষ করা যাবে তার নির্দিষ্ট সময় থাকা দরকার। টিকা পলিসি থাকা দরকার। কারণ বাংলাদেশে ডেল্টা ভেরিয়েন্ট রোগী বেশি। টিকাদান কৌশলগত পরিকল্পনা থাকতে হবে। এ ছাড়া পরীক্ষা আরও বাড়াতে হবে। তিনি আরও বলেছেন, যেভাবে মানুষ গ্রাম থেকে ঢাকায় আসছেন তাতে সংক্রমণের লাগাম টানাটা খুবই দুরুহ। সংক্রমণ কমাতে মানুষকে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে বলেও যোগ করেন এ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে গত এক দিনে সেরে উঠেছেন ১৪ হাজার ১৭ জন করোনা রোগী। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত সুস্থ হলেন ১০ লাখ ৭৮ হাজার ২১২ জন।

নমুনা পরীক্ষা তুলনামূলক কম হওয়ায় দেশে দৈনিক শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যাও কমেছে। তবে মৃত্যু বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৩১ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে ৯ হাজার ৩৬৯ জনের মধ্যে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানিয়েছে। তাদের নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত হল ১২ লাখ ৪৯ হাজার ৪৮৪ জন কোভিড রোগী। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এ মুহূর্তে সক্রিয় করোনা ভাইরাসের রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজার ৫৮৭ জন।

ভারতে উদ্ভূত ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারে জুলাই মাসজুড়েই দৈনিক রোগী শনাক্ত ১০ হাজারের আশপাশে ছিল। তবে কোরবানির ঈদের সময় নমুনা পরীক্ষা কমে গেলে রোগী শনাক্তও সাময়িকভাবে কমেছিল। তবে তার পর ২৮ জুলাই রেকর্ড নমুনা পরীক্ষায় রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল।

শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪৫ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ হাজার ৮৬২ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তার চেয়ে ১০ হাজার বেশি নমুনা পরীক্ষা করে বৃহস্পতিবার ১৫ হাজার ২৭১ জনের রোগী শনাক্ত হয়েছিল। কিন্তু শনিবারের বুলেটিনে দৈনিক নমুনা পরীক্ষা ১৪ হাজার কমে দাঁড়ায় ৩০ হাজার ৯৮০।

গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ২৪ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ১৪ শতাংশ।

কোরবানির ঈদের ছুটিতে নমুনা পরীক্ষা কমে যাওয়ার পর গত দুই সপ্তাহের যে তুলনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দেখিয়েছে, তাতে নমুনা পরীক্ষা ৫৯ শতাংশ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগী শনাক্তের হার বেড়েছে প্রায় ৫৮ শতাংশ।

১৮-২৪ জুলাই এবং ২৪-৩১ জুলাইয়ের তুলনা করে আরও দেখা গেছে, এক সপ্তাহে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে ১৯ শতাংশ, আর সুস্থতার হার বেড়েছে ৩৮ শতাংশ।

উল্লেখ্য, দেশে শনিবার পর্যন্ত মোট রোগী শনাক্ত হয়েছে ১২ লাখ ৪৯ হাজার ৪৮৪ জন। মৃত্যু হয়েছে ২০ হাজার ৬৮৫ জন। করোনামুক্ত হয়েছেন ১০ লাখ ৭৮ হাজার ২১২ জন মানুষ।

খুলনা গেজেট/এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!