খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২০ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নতুন সভাপতি মিশা, সাধারণ সম্পাদক ডিপজল

আমার নামে গল্প বানিয়ে গণমাধ্যমে বিক্রি করেছে ঢাবির শীর্ষ ব্যক্তিরা : সামিয়া

গে‌জেট ডেস্ক

৬ বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শীর্ষপদের ব্যক্তিরা তার নামে নানা গল্প বানিয়ে গণমাধ্যমে বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন সামিয়া রহমান, যাকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পদাবনতি দেয়ার পর সম্প্রতি সেই আদেশ আবার অবৈধ ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট।

শুক্রবার সকালে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে ওই বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি। ঢাবি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এই সাবেক শিক্ষক।

বর্তমানে দেশের বাইরে থাকা সামিয়া রহমান লিখেছেন, ‘গত ৬টা বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষপদের ব্যক্তিদের হিংসা, প্রতিহিংসা, নোংরামি, ষড়যন্ত্র দেখতে দেখতে কখনো মনে হতো, আমিও ওদের মতোই ওদের ঘৃণা করি, ওদের প্রকৃত চরিত্র উন্মোচন করি।

‘আবার পরে মনে হতো, তাহলে আমিও তো ওদের পর্যায়েই নোংরামিতে নেমে গেলাম। তফাত আর থাকল কোথায়- মানুষে আর অমানুষে।’

তিনি লিখেছেন, ‘ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষা করেছি। সৃষ্টিকর্তা পরীক্ষা করলেও শেষ পর্যন্ত ন্যায় বিচার করেন বলেই বোধহয় উচ্চ আদালত প্রমাণ দিয়েছে ওদের সিদ্ধান্ত অবৈধ। গত ৬ বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ ব্যক্তিরা আমার নামে নানা গল্প বানিয়ে বছরের পর বছর গণমাধ্যমে বিক্রি করেছে।’

সামিয়া ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমাকে তারা হুমকি-ধমকির মধ্যে রেখেছিল ক্রমাগত। আমি চাকরি না ছাড়লে, আমি গণমাধ্যমে বক্তব্য দিলে আমার ক্ষতি করবে- এমন প্রচণ্ড চাপের মধ্যে বছরের পর বছর আমি ছিলাম।

‘যে লেখাটিতে আমি জড়িত ছিলাম না, আমার স্বাক্ষর ছিল না, সেই লেখাটি নিয়ে আমার বিরুদ্ধে তারা ষড়যন্ত্র করে গেছে বছরের পর বছর। শিকাগো প্রেসের নাম করে মিথ্যা ফেইক চিঠি তৈরি করে আমার বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন তদন্ত শুরু করে।’

এই শিক্ষক ফেসবুকে আরও লিখেছেন, ‘আদালতে তো প্রমাণিত হয়েছেই এটি মিথ্যা, ফেইক চিঠি। ট্রাইব্যুনাল বলেছে, প্লেজারিজম হয়নি। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় শাস্তি দিল। কিসের ভিত্তিতে? এমনকি ট্রাইব্যুনালের রায়ের কপি পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে দিতে চায়নি মাসের পর মাস, পাছে সত্যি প্রমাণ হয়ে যায়।

‘মারজানের লিখিত স্বীকারোক্তিতে তার লেখা জমা দেবার, রিভিউ করা, স্বাক্ষর করার প্রমাণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে থাকা সত্ত্বেও একবারের জন্যও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন গণমাধ্যমে সেটি প্রকাশ করেনি। একবারের জন্যও প্রকাশ করেনি যে আমার কাছ থেকে তারা কোনো লেখা পায়নি এবং ডিন অফিস থেকেও কোনো লেখা আমার কাছে রিভিউ করার জন্য আসেনি।’

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগাম অবসর চেয়ে করা সামিয়া রহমানের আবেদন সম্প্রতি গ্রহণ করে তাকে অবসরের অনুমতি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পাশাপাশি তার কাছ থেকে ১১ লাখ ৪১ হাজার ৬০১ টাকা পাবে জানিয়ে এই টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ওই প্রসঙ্গে ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘সবচেয়ে হাস্যকর বিষয় ৪ আগস্ট মামলায় হেরে বর্তমান প্রশাসন ৮ আগস্ট আমার কাছে টাকা দাবি করে একটা ই-মেইল পাঠায়। যে ই-মেইল ৮ আগস্ট পাঠানো, কিন্তু এর ভেতরে ব্যাক ডেটে হাতে লেখা ৩ আগস্ট। মামলায় হেরে যেয়ে কি এখন এই প্রতিহিংসা? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আমার কোনো দেনা নেই। বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আমার পাওনা আছে। আদালতে লড়াই করেছি। করে যাব। সৃষ্টিকর্তা বলেতো একজন আছেন। তিনিই ন্যায়বিচার করবেন।’

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সামিয়া রহমান ও সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানের যৌথভাবে লেখা ‘এ নিউ ডাইমেনশন অফ কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার: এ কেস স্টাডি অফ দ্য কালচারাল ইম্পেরিয়ালিজম’ শিরোনামের আট পৃষ্ঠার একটি গবেষণা প্রবন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সোশ্যাল সায়েন্স রিভিউ’ জার্নালে প্রকাশ করা হয়।

এটি ১৯৮২ সালের শিকাগো ইউনিভার্সিটির জার্নাল ‘ক্রিটিক্যাল ইনকোয়ারি’তে প্রকাশিত ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোঁর ‘দ্য সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার’ নামের একটি নিবন্ধ থেকে প্রায় পাঁচ পৃষ্ঠা হুবহু নকল বলে অভিযোগ ওঠে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এক লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এই চুরির কথা জানিয়েছিল ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো প্রেস।

শুধু ফুকোঁই নন, বুদ্ধিজীবী এডওয়ার্ড সাঈদের ‘কালচার অ্যান্ড ইম্পেরিয়ালিজম’ বইয়ের পাতার পর পাতা সামিয়া ও মারজান হুবহু নকল করেন বলে অভিযোগ ওঠে। তার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমেদকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট।

দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে গত বছর ওই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২৯ অক্টোবর তাদের অ্যাকাডেমিক অপরাধের শাস্তির সুপারিশ করতে আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহকে আহ্বায়ক করে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ট্রাইব্যুনাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে শাস্তির বিষয়ে সুপারিশ জমা দিলে সিন্ডিকেটের সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়।

গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির বিষয়টি প্রমাণ পাওয়ার পর ২০২১ সালের ২৮ জানুয়ারি সিন্ডিকেট সভায় তাকে এক ধাপ পদাবনতি দিয়ে সহকারী অধ্যাপক করা হয়। তবে এই আদেশের বিরুদ্ধে তিনি উচ্চ আদালতে যান।

গত ৪ আগস্ট সামিয়া রহমানকে পদাবনতির আদেশ অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে তাকে সব সুযোগ-সুবিধা ফিরিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। তবে আগেই সামিয়া আগাম অবসরের আবেদন করায় এবং সেটি কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করায় আপাতত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার শিক্ষকতা করা হচ্ছে না।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!