খুলনা, বাংলাদেশ | ২৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে আরও ৪ মৃত্যু, একদিনে হাসপাতালে ভর্তি ৪৪৪ জন

আনছার উদ্দিন হত্যা : আ.লীগ নেতাকর্মীরা আসামী, আড়ালে থেকে যাচ্ছে প্রকৃত অপরাধীরা

একরামুল হোসেন লিপু

দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত বারাকপুর বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ আনছার উদ্দিন হত্যায় মামলায় প্রকৃত অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা। তারা বলেছেন, দীর্ঘদিন আধিপত্য নিয়ে এলাকায় যাদের সাথে দ্বন্দ্ব। তাদেরকে আনছারউদ্দিন হত্যা মামলায় আসামী করা হয়েছে। যার মধ্যে অনেকে অসুস্থ, পঙ্গু ও অসহায় মানুষও রয়েছেন। কেউ কেউ আনছারউদ্দিন ও তাঁর সহযোগীদের আক্রোশের শিকার।

পুলিশ, স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, আনছারউদ্দিন হত্যায় এজাহারভুক্ত আসামির সংখ্যা ২৩। যার তালিকায় রয়েছেন বারাকপুর ইউপি চেয়ারম্যান গাজী জাকির হোসেন হত্যা মামলার বাদী, তাঁর ভাই, ভাইপো, ভাগনে, বোনের জামাইসহ নিকটাত্মীয়রা। অভিযোগ রয়েছে, আনছারউদ্দিন ও তার সহযোগীদের হাতে খুন হন গাজী জাকির।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায, করোনাকালীন সময়ে পূর্ব বিরোধ, বাজারের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২০২০ সালের ১৭ এপ্রিল শেখ আনছার উদ্দিন ও তাঁর সমর্থকের হাতে লাঞ্ছিত হন গাজী জাকির হোসেন। একই দিন বারাকপুর বাজার সংলগ্ন গাজী জাকির হোসেনের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। গাজী জাকির বাড়ির দোতালায় আত্মগোপনে থেকে নিজেকে সন্ত্রাসী হামলার হাত থেকে রক্ষা করতে পারলেও হামলার শিকার হক তাঁর বড় ভাই গাজী নাসিরউদ্দিন। গাজী নাসিরউদ্দিনের বয়স ৭০ । তিনি বারাকপুর বাজার কমিটির নির্বাচিত সভাপতি। সন্ত্রাসীরা বয়স্ক এই ব্যক্তিকে পিটিয়ে তাঁর ডান হাত ভেঙ্গে দেয়। সেই থেকে ডান হাত পঙ্গুত্ব নিয়ে বেঁচে আছেন। শেখ আনছারউদ্দিন হত্যা মামলায় এজাহারভূক্ত অন্যতম আসামী তিনি। এজাহারভুক্ত অপর আসামি গাজী জাকির হোসেন হত্যা মামলার বাদী ও তাঁর ছেলে কাইফ গাজী (২২)।

আসামী হয়েছেন শেখ আনছারউদ্দিন ও তাঁর সহযোগীদের হাতে প্রকাশ্য হামলায় পঙ্গুত্ব বরণকারী গাজী জাকির হোসেনের চাচাত ভাই মোস্তাক গাজীর ছেলে আন্দু গাজী (২৭), ২০২১ সালের ৪ জুন বারাকপুর ইউনিয়নের নন্দনপ্রতাপ ব্রিজের কাছে শেখ আনছার উদ্দিনের সহযোগীদের হাতে হামলার শিকার হন বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান জাকির গাজীর ভাইপো উপজেলা যুবলীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক গাজী সাহাগীর হোসেন পাভেল।

পাভেলকে করা হয়েছে মামলার (প্রধান) ১নং এজাহারভুক্ত আসামী। জাকির গাজীর ভাগনে অ্যাডভোকেট পারভেজ মিনা (৩০)কে করা হয়েছে মামলার ২ নং এজাহারভুক্ত আসামি। তাঁর বড় ভাই পলাশ মিনা( ৪৫) কে ৩ নং আসামী করা হয়েছে। গাজী জাকির হোসেনের চাচাতো ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য ফরহাদ গাজী (৫০)কে (গ্রেফতারকৃত) করা হয়েছে মামলার ৪ নং আসামি। গাজী নাসির উদ্দিনের ছেলে বারাকপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বপ্নতরীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি গাজী আলী বাকের প্রিন্স (৩২)কে করা হয়েছে মামলার ৫ নং আসামী। গাজী জাকির হোসেনের বড় ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম গাজী গোলাম মোস্তফার ছেলে রাসেল গাজী (৩০) কে করা হয়েছে মামলার ৬ নং আসামী। গাজী জাকির হোসেনের চাচাতো ভাই যথাক্রমে মঞ্জু গাজী (৫২), মিদু গাজী (৫৫), গাজী সেলিম রেজা (৪৮), মারুফ গাজী (৩০) কে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে।

আসামি করা হয়েছে গাজী জাকির হোসেনের ভাইপো শিমুল গাজী (২৬), মারুফ গাজী (৩০), জাকির গাজীর ভাগনে মাহাবুব শেখ (৩২) (গ্রেফতারকৃত), আজিবর শেখ (৩৫), ভগ্নিপতির ভাইপো বিল্লাল চৌধুরী (৪০), আজিজুল চৌধুরী (৩০), মায়ের দিকের আত্মীয় বাপ্পি শেখ (৩০), আসাদ মোল্লা (২৫) কে। গাজী জাকির হোসেনের বোনের দিক থেকে আত্নীয় জনি শেখ (৩২) ও এজাহারভুক্ত আসামী।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, মামলার এজাহারভুক্ত আসামিদের অধিকাংশেরই বিরুদ্ধে থানায় কোনো অভিযোগ কিংবা মামলা নেই। এলাকায় তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী ও হত্যার মতো কর্মকান্ড ঘটাতে পারে এমন রেকর্ড নেই। তারপরও পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী তদন্ত করছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, আনছার উদ্দিন হত্যা মামলায় আসামীরা অধিকাংশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়। অন্যরা সমর্থক। পক্ষান্তরে আনছার উদ্দিন আওয়ামী লীগের পদ দখল করলেও তাদের পরিবার ও বংশ বিএনপি-জামায়াত ঘরনার। তাই আনছার উদ্দিন হত্যা মামলা নিয়ে বাদী তাঁর ছেলে তানভীর শেখ তৃতীয় পক্ষের রাজনীতির কৌশলে পড়েছেন।

বিশেষ করে পাভেলকে আনছার হত্যা মামলায় তাকে প্রধান আসামীসহ আওয়ামী লীগ ঘরানোর ব্যক্তিদের অভিযুক্ত করায় স্থানীয়ভাবে দলটি দুর্বল হয়ে পড়বে।

বারাকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গাজী আব্দুর রউফ খুলনা গেজেটকে বলেন, দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত শেখ আনছার উদ্দিন ও আমার বাড়ি একই গ্রাম লাখোয়াটীতে। পত্র পত্রিকায় দেখলাম শেখ আনছারউদ্দিনকে বারাকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। এটি সত্য নয়। তিনি বলেন, আমি বারাকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়ে আসছি প্রায় সাড়ে তিন দশক থেকে। আনছার কখনো বারাকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন না।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা খানজাহান আলী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কবির হোসেন মাতব্বর খুলনা গেজেটকে বলেন, মামলার এজাহারে কাদের নাম এসেছে, কে কার আত্মীয় এটা কোন বিষয় নয়। এটা নিয়ে মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয়ের কোনো অবকাশ নেই। তদন্ত না করে কিছু বলা যাবে না। কে বা কারা প্রকৃত দোষী। আমরা সবেমাত্র মতামত তদন্ত শুরু করেছি। নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনাই আমাদের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!